বিডিনিউজ প্রতিদিন: আজ ২৩ শে আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার সকাল ১০.০০ ঘটিকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) রমনা, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এস এ মালেকের সভাপতিত্বে এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান লাল্টুর সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ছিল। আন্তর্জাতিক, পুঁজীবাদী গোষ্ঠি, ৭১’র পরাজিত শক্তি, ধর্মান্ধগোষ্ঠি এবং এ দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট পৃথিবীর ইতিহাসে বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ১৫ আগস্ট ও ২১ শে আগস্ট হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাথা। এই ২টি হত্যাকান্ড ঘটার মূল কারণ ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে আনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতাকে অর্থহীন করা। সূতরাং তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ২১ শে গ্রেনেড হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে এই সমস্ত ঘটনার পিছনে যারা জড়িত ছিল তাদের প্রকৃত স্বরূপ জাতির সামনে তুলে ধরা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনী মোসতাক ও জিয়া সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার রহিত করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আইন নাই যে জাতির পিতার হত্যার বিচার করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, এখনও খন্দকার মোসতাক ও খুনীদের প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা সুযোগ পেলেই যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ৭৫’র রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দেশ অনেক পিছিয়ে গেছে। আর যেন এরকম মর্মান্তিক, দুঃখ জনক ঘটনা না ঘটে সে দিকে সকলে সজাগ থাকতে হবে। আমরা সবাই যদি সচেতন থাকতাম এবং সকলের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতাম তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হারাতাম না।
মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু ভাবলেন এই পাকিস্তান বাঙালির জন্য সুখকর হবে না। তাই তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অবতীর্ণ হলেন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন বলেন, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী পুরুষ। তাঁর দেহের মৃত্যু ঘটেছে কিন্তু আদর্শের মৃত্যু ঘটেনি। ঘাতকরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা ভাবেনি বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। জীবিত মুজিব থেকেই আজ মৃত মুজিব আরো বেশি প্রাসঙ্গিক, শক্তিশালী ও আদর্শিক। তাঁর চেতনার মৃত্যু নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোঃ আকতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। তিনি একজন খাটি বাঙালি ছিলেন মনে প্রাণে। এমন মানুষের আর জন্ম হবে না। তিনি শুধু বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতাই ছিলেন না, বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত, অবহেলিত ও দুঃখী মানুষের নেতা ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ এস এ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী একটি ইতিহাস। সারাজীবন তিনি বাঙালির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। অধিকার হারা বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং সর্বক্ষেত্রে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর একটি রাজনৈতিক দর্শন ছিল। সেই আলোকে তিনি সমাজ বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি যখন বুঝলেন পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থায় ধন বৈষম্য সৃষ্টি হয় এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব হয় না সেই জন্য তিনি স্বাধীনতার পর পর রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন আনেন সাংবিধানিক ভাবে। মূলত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম করেছেন ২টি নির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে। একটি বাঙালির স্বাধীনতা অন্যটি অর্থনৈতিক মুক্তি। বাঙালি স্বাধীনতা পেয়েছে সত্য কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি আজও অর্জিত হয়নি। দেশ স্বাধীন হলেও দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত তখনও অব্যাহত ছিল। একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে তাঁর গড়া দেশ ধ্বংস হবে তা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। এ জন্য তিনি অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা আনার লক্ষ্যে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাকশাল গঠন করেন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে শোষিত, বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হতো। অনেকে সমালোচনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠনের কারণেই নিহত হয়েছেন, এটা সঠিক নয়। বাকশাল ছিল একটি মতবাদ, একটি দর্শন। এর মধ্যে খারাপ কিছু ছিল না। যে কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগই তিনি পেলেন না তাঁর পূর্বেই তিনি নিহত হলেন সেই কর্মসূচিকে কিভাবে খারাপ বলা যায়। বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রনে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নতুন ফর্মুলা দেন। এটা বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই তার দর্শন হতো বিশ্বের অন্যতম সেরা মতবাদ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন, উপাচার্য, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য, অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, সাবেক ডীন, ফার্মেসী অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রোভিসি, বুয়েট, অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন, সমাজ কর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, ফার্মেসী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর ড, আনোয়ারা বেগম, চেয়ারম্যান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আব্দুল কাদের, সহযোগী অধ্যাপক, ভুগোল বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, এডভোকেট দিদার আলী, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আব্দুল মতিন ভূইয়া, মোঃ শহিদুল্লাহ, মোঃ খন্দকার নজরুল ইসলাম, তারেক ইমতিয়াজ খান, মোঃ নেছার আহমেদ ভূইয়া, খাজা শামসুদ্দিন, আবুলে হোসেন, মোঃ আলাউদ্দিন, এস এম সিরাজুল ইসলাম, ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম, মোঃ আজিজুল হক, অধ্যাপক ডাঃ এ এন নওসাদ খান প্রমুখ।
আনন্দকুমার সেন, ঢাকা।